ক’দিন ধরেই সমস্ত শহরে খুব উত্তেজনা। এর আগে মিছিলে শুনতাম, “ জেলের তালা ভাংবো, শেখ মুজিবকে আনবো”! মিথ্যে ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিব ও আরো অনেক নেতাকে জেলে বন্দী করে রেখেছিলো। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়। আব্বা যখন আম্মার সাথে এসব কথা বলেন তখন কান পেতে শুনি। সেই মিথ্যে মামলায় রায় বেরিয়েছে। শেখ মুজিব সহ অন্যন্য নেতারা নির্দোষ প্রমানিত হয়ে জেল থেকে বের হয়েছেন। কিন্তু গন্ডগোল তো কমছেনা। বেড়েই চলছে। ঢাকা ও অন্যান্য জায়গায় ছাত্রদের উপর পুলিশ গুলি করেছে। কয়েকজন মারাও গিয়েছে। আব্বা বলেন, আইয়ুব খান এটা ঠিক করছেন না। গোল মুখ, পাকানো মোচ আইয়ুব খানের ছবি তো পত্রিকায় দেখি। সেই যে ঢাকায় থাকতে আব্বা, আম্মা আইয়ুব খানকে ভোট দিয়ে এলেন। মানিক কাকা দিয়েছিলো ফাতিমা জিন্নাকে। আমি আম গাছের ডালের ঝান্ডা নিয়ে কত চেঁচিয়েছি “ ফকিনা জিন্না জিন্দাবাদ”! আব্বা বলেন, ভাসানী ঠিকই বলেছেন “ এ হলো জালেম ও মজলুমের লড়াই”। হা করে আব্বার কথা শুনি। ভাসানী, ঐ দাড়ীওয়ালা লোকটি? আব্বার সাথে গিয়েছি উনার কাছে। উনি তখন টাঙ্গাইলের সন্তোষে এসেছিলেন।। কুড়ে ঘরের খড়ের চালায়, পুরনো একটি চৌকিতে ছেড়া মাদুর বেছানো। তাতে উনি বসে ছিলেন। আশে-পাশে অনেক লোকজন। দেখে মনে হচ্ছিলো যেন দরবেশ। আব্বা বলেন, “ মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী।  সারা জীবন গরীব, দুখী, মজলুম মানুষের জন্য লড়াই করছেন। জমিদারের মেয়ে বিয়ে করেছেন, কিন্তু কেমন নির্লোভ। নিজে সব সময় গরীব, দুখী, চাষাদের জন্য লড়াই করছেন। নেতা হলে এমনটিই হতে হয়। আসামের ধুবড়ি জেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের চরে প্রথম যখন কৃষক সম্মেলন করেন, তখন থেকেই লোকে তাঁকে ভাসানী নামে সম্বোধন করে। উনার নামের সাথে যোগ হয় ভাসানী।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান